কি কি কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় ? রোজা নিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব

কি কি কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় ? রোজা নিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব


মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান মাসে যারা রোজা রাখেন, তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছুই মুখে দেন না। 

  • মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বয়সের বেশিরভাগ মানুষও এসময় রোজা রাখেন।
  • বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম বিশ্বাস করেন, এ মাসে স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ ও বেশি সময় ধরে প্রার্থনার ভেতর দিয়ে তারা নতুন করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারবেন।
  • তাই, ধর্মে রোজা সংক্রান্ত যেসব নিয়মের কথা বলা আছে, রমজানে তারা সেগুলো মেনে চলেন।
  • কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলো সম্বন্ধে ধর্মে সরাসরি কিছু বলা না থাকলেও অনেকে সেসবও মানেন।
  • রোজা নিয়ে ধর্মে কী কী বলা আছে, কী কী বলা নেই, ধর্ম নিয়ে কী কী ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর মানুষ গুগলের কাছে জানতে চেয়েছে।
  • গুগলের কাছে জানতে চাওয়া সেরকমই কিছু প্রশ্নের উত্তর এই প্রতিবেদনে দেওয়া হবে।

সাধারণ মুসলমানরা অনেক কিছুকেই রোজা ভাঙ্গার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, রোজা ভাঙ্গার মূল কারণ আসলে পাঁচটি। সেগুলো হলো—

  1. ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার খেলে
  2. ইচ্ছাকৃতভাবে পান করলে
  3. শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লে
  4. মুখ ভর্তি বমি হলে
  5. রোজা রাখা অবস্থায় সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “রক্তপাত বা বমি হলে রোজাদার ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করতে পারেন। সেজন্যই ধর্মে এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।”


কি কি কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় ? রোজা নিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব

রোজা সম্বন্ধে প্রচলিত ভুল ধারণাসমূহ ?

এই পাঁচ কারণের বাইরে আরও কিছু বিষয়কে রোজা ভাঙ্গার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। কিন্তু সেগুলো আদতে রোজা ভাঙ্গার মতো কোনও কারণই নয়। বরং, সমাজে প্রচিলত থাকার কারণে রোজাদাররা সেগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এতে করে তিনি নিজে যেমন কষ্টে থাকেন, সেইসাথে তার চারপাশের মানুষকেও বিড়ম্বনায় ফেলেন। 


অধ্যাপক শামছুল আলম এই প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো সমন্ধে বলেন, “মানুষ এগুলো জানাশোনা বা পড়াশোনার অভাবে বলে। তারা আধুনিক শিক্ষা পায়নি।” তাই, রোজা সম্বন্ধে প্রচলিত তেমনই কিছু ভুল ধারণা সম্বন্ধে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।


মুখের লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়

মুখের লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায় ?

  • মুখের লালা যদি পেটে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে; এটি একটি বহুল চর্চিত কথা।
  • এই প্রচলিত ধারণার কারণে রমজানে মানুষ যেখানে সেখানে থু থু ফেলে। এতে করে রোজাদার ব্যক্তিটি একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি করছেন, অন্যদিকে তিনি পাশের মানুষকেও অস্বস্তিতে ফেলছেন।
  • অধ্যাপক শামছুল আলম এ বিষয়ে বলেন, “মুখের লালা গিলে ফেললে কিচ্ছু হয় না রোজার। এ বিষয়ে ধর্মে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই অর্থাৎ, ইন্টার্নাল কিছু পেটে ঢুকলে রোজা ভেঙ্গে যাবে না।”
  • তবে অন্য কারও মুখের লালা যদি নিজের মুখে যায়, তাহলে রোজা থাকবে না। অর্থাৎ, রোজা পালন করা অবস্থায় সঙ্গীকে চুমু খাওয়া যাবে না।


দাঁত ব্রাশ করা যাবে না

দাঁত ব্রাশ করা যাবে না ?

  • অনেকে বলেন , রোজা রাখা অবস্থায় দাঁতও ব্রাশ করা যাবে না। কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁত ব্রাশ না করার কারণে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয় এবং তাতে কথা বলার সময় চারপাশে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
  • কিন্তু এই গন্ধ বিষয়ে অনেক রোজাদারকে বলতে শোনা যায়, রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধও ভালো বা রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধে বিরক্ত হওয়া যাবে না।
  • কিন্তু এ বিষয়ে মি. আলম শুরুতেই এক বাক্যে বলেন, “দাঁত ব্রাশ করলে রোজার কিচ্ছু হবে না।”
  • “তবে পেস্ট আছে তো, ভুলে গলায় চলেও যেতে পারে। পেস্ট গলায় গেলে রোজা মাকরূহ হবে। সেজন্য এটা সাহরী খাওয়ার আগে করাই ভালো,” যোগ করেন তিনি।
  • সুতরাং, কেউ যদি সাবধানতা বজায় রেখে অল্প পরিমাণ পেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন, তাতে সমস্যা নেই।


সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না

সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না ?

  • অনেকের মতে, রোজা রেখে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু, মানুষের মনে গেঁথে থাকা এই ধারণাকেও ভিত্তিহীন বলে জানান অধ্যাপক শামছুল আলম।
  • তিনি বলেন, “সুগন্ধি বলতে আতর ব্যবহার করা যাবে, এটা তো নবীর সুন্নত। যুগে যুগে নবী রাসূলরা আতর ব্যবহার করে গেছেন। এটা ব্যবহারে কোনও নিষেধ নেই।”
  • তবে পারফিউমও ব্যবহার করা যাবে কি না, এমন এক প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন যে পাফফিউম ব্যবহারের বিষয়ে এক ধরনের ‘সতর্কতা’ আছে।
  • “কারণ পারফিউম তৈরিতে নাকি চর্বি ব্যবহৃত হয়। এটা তো আমরা জানি না। তাই এটা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলেই বেশি ভালো হয়, শুধু আতর ব্যবহার করা ভালো।”
  • তবে তিনি এও বলেন, “কিন্তু আপনি পারফিউম ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এটি তৈরির সময় তো আপনি দেখেননি। তবে বেশি তাকওয়া (ধার্মিকতা বা ধর্মপরায়ণতা) দেখাতে চাইলে দিনের বেলা ব্যবহার না করাই ভালো। একদম-ই ব্যবহার না আরও ভালো।”
  • পারফিউম বা আতর ব্যবহার করা রোজা ভাঙ্গার কারণ না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া, পৃথিবীতে কিন্তু এখন সবকিছু হালালও উৎপাদন হয়। তাই, কেনার সময় খেয়াল করা উচিৎ যে কোন দেশ হালাল উৎপাদন করে। এসব বিষয়ে একটু সচেতন হয়ে চলা উচিৎ।”

রোজা রেখে আতর ব্যবহার করা নিরাপদ হলেও শর্তসাপেক্ষে পারফিউমও ব্যবহার করা যায় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শামছুল আলম।


‘ভুল করে’ পানাহার করে ফেললে রোজা ভাঙ্গে


‘ভুল করে’ পানাহার করে ফেললে রোজা ভাঙ্গে ?

  • অনেকসময় এমন হয় যে একজন ব্যক্তি সারাদিন ধরে রোজা আছেন। কিন্তু হঠাৎ হয়তো মনের ভুলে সে খাবার খেয়ে ফেললো বা পানি পান করে নিলো।
  • কিন্তু সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার পর ঐ রোজাদার ব্যক্তি ভাবেন যে তার রোজা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে। এটা ভেবে হয়তো তখন সে পরিপূর্ণ আহারই করে ফেলেন।
  • এ প্রসঙ্গে মি. আলম বলেন, “মনের ভুলে ভরপেট খাবার খেলেও রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা ইসলামে বলা হয়নি। এতে রোজা মাকরূহ হতে পারে। রোজা ভেঙ্গে যাবে, যদি ব্যক্তি ইচ্ছা করে পানাহার করে।”
  • এখানে মাকরূহ অর্থকে তিনি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “মাকরূহ মানে অপছন্দনীয়। মাকরূহ মানে— রোজা হয়ে যাবে, কিন্তু রোজার সৌন্দর্যবোধটা শতভাগ হলো না।”

তিনি বলেন, “মুখে খাবার নেওয়ার পর যখনই মনে আসবে, তখন ফেলে দিতে হবে। আর গেলা যাবে না।”


রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের অপ্রয়োজনীয় পশম কাটা যাবে কি? কাটলে রোজা হবে নাকি রোজা ভেঙ্গে যাবে?


রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের অপ্রয়োজনীয় পশম কাটা যাবে কি? কাটলে রোজা হবে নাকি রোজা ভেঙ্গে যাবে?


এমন প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, সিয়ামরত অবস্থায় কেউ যদি হাতের নখ কাটেন বা অবাঞ্ছিত লোমগুলো কাটেন, তাহলে তার সিয়াম নষ্ট হবে না। এটা জায়েজ রয়েছে। এটি মাকরুহ হবে না। সিয়ামের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। পরিচ্ছন্নতার জন্য এটা অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। উত্তম হলো, এগুলো কেটে নেয়া।  


রোজা রেখে চুল ও দাড়ি কাটা যাবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে শায়খ মাহমুদুল হাসান বলেছেন, হলো- রোজা অবস্থায় নখ কাটাতে বা চুল কাটতে কোনো অসুবিধা নেই। এগুলোর সঙ্গে রোজার কোনো সম্পর্ক নেই। রোজা রেখে দাড়ি সেভ করলেও রোজা ভাঙবে না।

তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩/৩৩; সুনানে কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৮২৫৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৯৩১৯)


রোজা রেখে ঔষধ খাওয়া যাবে না ?

রোজা রেখে ঔষধ খাওয়া যাবে না ?

  • অনেক মিথের ভীড়ে আরেকটি মিথ হলো, রোজা রেখে কিছুতেই ঔষধ সেবন করা যাবে না।
  • যদিও এর আগে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সাথে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে- রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ।
  • ঢাবি অধ্যাপক মি. আলমও বলেন, “যে ঔষধ পেটে যায়, মানে ক্ষুধা কমায়, সেগুলা নিষেধ। কিন্তু নাকে বা চোখে কোনও ড্রপ দিলে, সেটাতে কোনও সমস্যা নাই।”
  • যেসব ওষুধ গিলে খেতে হবে, সেগুলো ইফতারের পরে বা সেহরির আগে খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
  • তবে পেনিসিলিন, ইনজেকশন, ইনসুলিন অথবা টিকা দেওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইনসুলিন ইফতারর আগ মুহূর্তে নিতে হবে। তবে ইমার্জেন্সি হলে সব বৈধ।”


লবণ চেখে দেখলে রোজা হবে কি

লবণ চেখে দেখলে রোজা হবে কি?


আমি একটি হোটেলে রান্না করি। রমজান মাসে রান্নার সময় লবণ চেখে দেখার প্রয়োজন হয় অনুমান করে দিলে মাঝে মাঝে লবণ কম-বেশি হয়ে যায়। তখন ম্যানেজার ধমক দেন। তো রমজান মাসে যদি লবণ দেখার জন্য সামান্য ঝোল মুখে নিয়ে— সাথে সাথে কুলি করে ফেলি; এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কি না? একটু জানিয়ে বাধিত করবেন।


এই প্রশ্নের উত্তর হলো- উল্লেখিত ক্ষেত্রে তরকারির লবণ দেখার জন্য জিহ্বায় সামান্য দিয়ে আবার থু থু করে ফেলে দেবেন। আপনার জন্য এভাবে লবণ দেখা জায়েজ হবে। ফলে আপনি এভাবে করলে রোজা নষ্ট হবে না। প্রয়োজনে এর পর পানি দিয়ে কুলি করে ফেলে দেবেন।


তথ্যসূত্র : মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, বর্ণনা : ৯৩৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া : ১/২০৪; আল-মুহিতুল বুরহানি : ৩/৩৫৬; আত-তাজনিস ওয়ালমাযীদ : ২/৪৮; আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৭৯; তাবয়িনুল হাকায়েক : ২/১৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৯


প্রসঙ্গত, রমজান মাসে রোজা ফরজ। এই ফরজ ইবাদত পালনের কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। সেগুলোর প্রতি যত্ন রেখে অত্যন্ত সতর্কতা ও পবিত্রতার সঙ্গে রোজা পালন করতে হয়। কারণ, ছোটখাটো কিছু ভুলেও রোজা মাকরুহ হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে রোজার পবিত্রতা। তাই কী কী কারণে রোজা মাকরুহ হয়— তা জেনে রাখা জরুরি।


“মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে, স্বাস্থ্যের অবনতির আশঙ্কা থাকলে ইসলামে সব বৈধ” যোগ করেন তিনি।

অনলাইন ইনকাম সম্পর্কিত প্রশ্ন

ব্লগ সাইট থেকে প্রতি মাসে 20,000 টাকা উপার্জন করতে কতগুলি ভিজিট প্রয়োজন

2024 সালে 6 টি উপায়ে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন

বাংলা ব্লগে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?

ব্লগিং ওয়েবসাইটের জন্য গুগল অ্যাডসেন্সের প্রয়োজনীয়তা  কি ?

অ্যাডস্টেরা থেকে প্রচুর ইনকাম করার উপায় স্টেপ বাই স্টেপ?

কিভাবে ওয়েবসাইট দিয়ে ফেসবুক পিক্সেল সেটআপ করবেন ?

কীভাবে ভালো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবো?

আরও জানুন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি ?

আরও জানুন ওয়েব ডিজাইন কি ?

আমাদের সম্পর্কে জানুন

যোগাযুগ করুন আমাদের সাথে mdyaminmia2@gmail.com

Yamin Dev Blog

IYamin Dev Blog is your gateway to the latest in tech, coding, and development trends. Explore insightful articles, tutorials, and reviews curated by passionate developers. Whether you're a seasoned pro or a coding enthusiast, we've got something for you. Join our community on Facebook for engaging discussions, updates, and a closer look at the evolving world of software development. Stay informed, inspired, and connected with Yamin Dev Blog - where coding meets creativity!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন